দো‘আ কবুলের শর্তাবলী


দো‘আ কবুলের শর্তাবলী :

(১) শুরুতে এবং শেষে হামদ ও দরূদ পাঠ করা
(২) দো‘আ আল্লাহর প্রতি খালেছ আনুগত্য সহকারে হওয়া
(৩) দো‘আয় কোন পাপের কথা কিংবা আত্মীয়তা ছিন্ন করার কথা না থাকা
(৪) খাদ্য-পানীয় ও পোষাক হালাল ও পবিত্র হওয়া
(৫) দো‘আ কবুলের জন্য ব্যস্ত না হওয়া
(৬) নিরাশ না হওয়া ও দো‘আ পরিত্যাগ না করা
(৭) উদাসীনভাবে দো‘আ না করা এবং দো‘আ কবুলের ব্যাপারে সর্বদা দৃঢ় আশাবাদী থাকা।

তবে আল্লাহ ইচ্ছা করলে যে কোন সময় যে কোন বান্দার এমনকি কাফের-মুশরিকের দো‘আও কবুল করে থাকেন, যদি সে অনুতপ্ত হৃদয়ে ক্ষমা চায়।

নিয়ম : খোলা দু’হস্ততালু একত্রিত করে চেহারা বরাবর সামনে রেখে দো‘আ করবে।[6] দো‘আর শুরুতে আল্লাহর প্রশংসা ও রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর উপর দরূদ পাঠ করবে। অতঃপর বিভিন্ন দো‘আ পড়বে।[7] যেমন,আল-হামদু লিল্লা-হি রবিবল ‘আ-লামীন, ওয়াছছালাতু ওয়াসসালা-মু ‘আলা রাসূলিহিল কারীম’ বলার পর বিভিন্ন দো‘আ শেষে ‘সুবহা-না রবিবকা রবিবল ‘ইযযাতি ‘আম্মা ইয়াছিফূন, ওয়া সালা-মুন ‘আলাল মুরসালীন, ওয়াল হামদু লিল্লা-হি রবিবল ‘আ-লামীন’ পাঠ অন্তে দো‘আ শেষ করবে।

দো‘আর আদব : (১) কাকুতি-মিনতি সহকারে ও গোপনে হওয়া।[8] (২) একমনে ভয় ও আকাংখা সহকারে এবং অনুচ্চ শব্দে অথবা মধ্যম স্বরে হওয়া।[9] (৩) সারগর্ভ ও তাৎপর্যপূর্ণ হওয়া।[10]

দো‘আ কবুলের স্থান ও সময় : আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব’।[11] এতে বুঝা যায় যে, যে কোন স্থানে যে কোন সময় যে কোন ভাষায় আল্লাহকে ডাকলে তিনি সাড়া দিবেন। তবে ছালাতের মধ্যে আরবী ব্যতীত অন্য ভাষায় দো‘আ করা যাবে না। দো‘আর জন্য হাদীছে বিশেষ কিছু স্থান ও সময়ের ব্যাপারে তাকীদ এসেছে, যেগুলি সংক্ষেপে বর্ণিত হ’ল :

(১) কুরআনী দো‘আ ব্যতিরেকে হাদীছে বর্ণিত দো‘আ সমূহের মাধ্যমে সিজদায় দো‘আ করা
(২) শেষ বৈঠকে তাশাহ্হুদ ও সালামের মধ্যবর্তী সময়ে
(৩) জুম‘আর দিনে ইমামের মিম্বরে বসা হ’তে সালাম ফিরানো পর্যন্ত সময়কালে
(৪) রাত্রির নফল ছালাতে
(৫) ছিয়াম অবস্থায়
(৬) রামাযানের ২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯ বেজোড় রাত্রিগুলিতে
(৭) ছাফা ও মারওয়া পাহাড়ে উঠে বায়তুল্লাহর দিকে মুখ করে দু’হাত উঠিয়ে
(৮) হজ্জের সময় আরাফা ময়দানে দু’হাত উঠিয়ে
(৯) মাশ‘আরুল হারাম অর্থাৎ মুযদালিফা মসজিদে অথবা বাইরে স্বীয় অবস্থান স্থলে ১০ই যিলহাজ্জ ফজরের ছালাতের পর হ’তে সূর্যোদয়ের আগ পর্যন্ত দো‘আ করা
(১০) ১১, ১২ ও ১৩ই যিলহাজ্জ তারিখে মিনায় ১ম ও ২য় জামরায় কংকর নিক্ষেপের পর একটু দূরে সরে গিয়ে দু’হাত উঠিয়ে দো‘আ করা
(১১) কা‘বাগৃহের ত্বাওয়াফের সময় রুকনে ইয়ামানী ও হাজারে আসওয়াদের মধ্যবর্তী স্থানে।
(১২) ‘কারু পিছনে খালেছ মনে দো‘আ করলে, সে দো‘আ কবুল হয়। সেখানে একজন ফেরেশতা নিযুক্ত থাকেন। যখনই ঐ ব্যক্তি তার ভাইয়ের জন্য দো‘আ করে, তখনই উক্ত ফেরেশতা ‘আমীন’ বলেন এবং বলেন তোমার জন্যও অনুরূপ হৌক’।[12] এতদ্ব্যতীত অন্যান্য আরও কিছু স্থানে ও সময়ে।

তিন ব্যক্তির দো‘আ নিশ্চিত কবুল হয় :

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, তিন ব্যক্তির দো‘আ নিশ্চিতভাবে কবুল হয়, এতে কোন সন্দেহ নেই
(১) মাযলূমের দো‘আ
(২) মুসাফিরের দো‘আ
(৩) সন্তানের জন্য পিতার দো‘আ।[13] তিনি বলেন, ‘ তোমরা মাযলূমের দো‘আ হ’তে সাবধান থাকো। কেননা তার দো‘আ ও আল্লাহর মধ্যে কোন পর্দা নেই’। [14]

[6] . আবুদাঊদ হা/১৪৮৬-৮৭, ৮৯; ঐ, মিশকাত হা/২২৫৬ ‘দো‘আ সমূহ’ অধ্যায়-৯। [7] . আবুদাঊদ হা/১৪৮১; তিরমিযী, নাসাঈ, মিশকাত হা/৯৩০-৩১ ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর উপর দরূদ পাঠ ও তার ফযীলত’ অনুচ্ছেদ-১৬; আলবানী, ছিফাত ১৬২ পৃঃ। [8] . আ‘রাফ ৭/৫৫। [9] . আ‘রাফ ৭/৫৬, ২০৫; যুমার ৩৯/৫৩-৫৪; ইসরা ১৭/১১০। [10] . আবুদাঊদ হা/১৪৮২; ঐ, মিশকাত হা/২২৪৬, ‘দো‘আ সমূহ’ অধ্যায়-৯। [11] . গাফের/মুমিন ৪০/৬০। [12] . মুসলিম, মিশকাত হা/২২২৮, ‘দো‘আ সমূহ’ অধ্যায়-৯, পরিচ্ছেদ-১। [13] . আবুদাঊদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/২২৫০, ‘দো‘আ সমূহ’ অধ্যায়-৯, পরিচ্ছেদ-২; ছহীহাহ হা/৫৯৬। [14] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১৭৭২, ‘যাকাত’ অধ্যায়-৬, পরিচ্ছেদ-১।

Posted from ইসলামী সাইট

This entry was posted in 11. যরূরী দো‘আ সমূহ, দো‘আ কবুলের শর্তাবলী. Bookmark the permalink.

1 Response to দো‘আ কবুলের শর্তাবলী

  1. Pingback: শিরক সম্পর্কে না জানার কারণে মাযার ও শহীদ মিনারের সামনে মাথা নত করে শিরক করেছি। এক্ষণে পূর্বে কৃ

Leave a comment